ওয়াসীম উদ্দিন জুয়েল
কারবালার ঘটনার পর এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয় ইয়াজিদ। অজানা এই রোগের কোনো ধরনের চিকিৎসা দিতে পারেনি চিকিৎকেরা। কেউ কেউ বলে এসময় তিনি প্রচন্ড পানির তৃষ্ণায় ভুগতেন কিন্তু পানি দিলেই খেতে পারতেন না সেই পানি বরং যন্ত্রনায় ছটফট করতেন।
ডাক্তারের পরামর্শে তার প্রিয় বানরকে নিয়ে শিকারে বের হয়েছিল ইয়াজিদ। হঠাৎ বানরটি হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজতে এক গহীন পাহাড়ে গিয়ে পৌঁছায়। এমনসময় ঘোড়া থেকে পড়ে যায় ইয়াজিদ কিন্তু ছুটন্ত ঘোড়া আর না থেমে আরো দ্রুত ছুটতে থাকে। তার শরীর ঘোড়ার সাথে বাঁধা থাকায় পাথরের আঘাতে মৃত্যু বরণ করে ইয়াজিদ। আর ঘোড়াটি অস্বাভাবিকভাবে ছুটতে থাকায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় ইয়াজিদের শরীর । মৃত্যুকালে ইয়াজিদের বয়স ছিলো মাত্র ৩৯।
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় পাপাত্না ইয়াজিদের পরে সবচেয়ে বেশি অপরাধী ছিলো, কুফার সে নিষ্ঠুর, বর্বর, স্বেচ্ছাচারী শাসনকর্তা ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ। সে নরাধমেরই নির্দেশেই হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও আহলে বায়েতদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর বিচার সে নরাধমকেও রেহাই দিলো না। মুখতার সাখফীর নির্দেশে তাঁর সেনাপতি ইব্রাহিম বিন মালিক আস্তারের বাহিনীর হাতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ঘটনার মাত্র ৬ বৎসর পর ১০ই মুহাররাম ৬৭ হিজরীতে ইবনে জিয়াদ নির্মম হত্যার স্বীকার হলো। সৈন্যরা তাঁর মস্তক কর্তন করে ইব্রাহিমের নিকট নিয়ে এলো, আর ইব্রাহিম সে মস্তক কুফায় মুখতারের নিকট পাঠিয়ে দিলো। সে হতভাগ্য পাষন্ডের জন্য কান্নাকাটি করার মতো কেউ ছিলো না। বরং তাঁর অপমুত্যুতে সবাই আনন্দ উৎসব করেছিলো।
.
সহীহ হাদীসে ইমারাহ বিন উমাইর হতে বর্ণিত আছে, “যখন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মস্তক তাঁর সাথীদের মস্তকের সাথে রাখা হয়েছিলো তখন আমি সে মস্তকগুলো দেখার জন্য গিয়েছিলাম। হঠাৎ শোরগোল ও হৈ চৈ পড়ে গেলো,আমি দেখলাম একটি ভয়ংকর সাপ এসে মাথাগুলোর মাঝখানে অবস্থিত ইবনে জিয়াদের মস্তকের নাকের ছিদ্রে ঢুকে গেলো এবং সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে বের হয়ে সাপটি অদৃশ্য হয়ে গেলো। অতঃপর আবার শোরগোল পড়ে গেলো, দুই – তিনবার এরূপ ঘটনা ঘটলো। [সুনানে তিরমিজি খন্ড ৫ম, পৃষ্ঠা-৪৩১, হাদীস নং- ৩৮০৫, দারুল ফিকর, বৈরুত]
.
ইবনে জিয়াদ, ইবনে সা’দ, সীমার, কায়েস বিন আসআছ, কন্দী, খাওলী বিন ইয়াজিদ, সিনান বিন আনাস নখয়ী, আব্দুল্লাহ বিন কায়েস, ইয়াজিদ বিন মালেক প্রমূখ হতভাগা পাষন্ডরা যারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)কে শহীদ করার জন্য অংশ নিয়েছিলো এবং যারা কারবালায় এই নির্মম বর্বরতার কাজের সাথে জড়িত ছিলো, তাদেরকে বিভিন্ন রকমের শাস্তির মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিলো এবং তাদের লাশ সমূহ ঘোড়ার পা দ্বারা পদদলিত করা হয়েছিলো।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাস্টার মাইন্ড জে. জিয়ার ভূমিকা কিছুদিন আড়ালে থাকলেও তা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার। জে. জিয়ার পরিণতিও নির্মম হয়। তিনিও তার স্বগোত্রীয় সেনাদের দ্বারা নির্মম হত্যার স্বীকার হন এবং তার লাশও পরিবার সদস্যরা দেখতে পায়নি। তিনিও কারবালার মর্মান্তিক হত্যার নেপথ্যের নায়ক ইয়াজিদের ন্যায় দুনিয়াতেই আল্লাহর বিচার ভোগ করেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার বর্গের হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয় এবং বাকিরা নামে- বেনামে পৃথিবীর পথে প্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, তাকে ও তার পরিবারকে হত্যা করেছিল তাদের শাস্তি হয়েছিল এ পৃথিবীতেই। বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর দীর্ঘদিন কুষ্ঠরোগে ভোগার পর মারা যায়। ঘসেটি বেগমকে পানিতে চুবিয়ে মারা হয়। মীরনের মৃত্যু হয় ইংরেজদেরই হাতে। রায় দুর্লভ দীর্ঘ কারাভোগের পর সেখানেই মৃত্যুবরণ করে এবং জগৎশেঠকে মীর কাশেম হত্যা করে। উমিচাঁদ পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মারা যায়। ধনকুবের ও ষড়যন্ত্রকারী নন্দকুমারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। নাটের গুরু রবার্ট ক্লাইভ ১৭৭৬ সালে আত্মহত্যা করে জীবনলীলা সাঙ্গ করে।
সীমালঙ্ঘনকারীরা আখিরাতের কঠিন আজাবের সম্মুখীন হওয়ার আগে দুনিয়াতেও আল্লাহর বিচারের সম্মুখীন হন।