আব্দুল বারী
যৌবনের ভাঁজ ছিলো তখন। এখন নাই। কুঁজো মা-বাবা। তার পরও কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে ছেলে- মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছে আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া বা অন্য কোথাও। শেষ জীবনে একটু শান্তি পাবার আসায়। তা’ আর হলো কোথায়? এইতো বুধবার (২৪ সেপ্টম্বর) সকাল ৮ ঘটিকায় আমার এক প্রতিবেশী অসিতীপর বৃদ্ধা রমনী আমাকে বল্লো, বৃদ্ধাশ্রম কেমন জায়গা?
আমি কৌতুহল হয়ে বললাম, কেনো? বৃদ্ধা বল্লো, আমি বৃদ্ধাশ্রমে যাবো! আমি বললাম, কেনো, আপনার দুই মেয়ে আমেরিকা থাকে না? তিনি বল্লেন, থাকে! ভাবলাম, আন্টি কোনো কষ্টে আছেন। অস্পুট স্বরে বল্লেন,পরিচর্যার কেউ নেই। স্বামী হারা।
বৃদ্ধার দুই মেয়ে যদি মাসিক ত্রিশ হাজার টাকা বেতন দিয়ে গর্ভধারিনী মায়ের পরিচর্যার জন্য একজন জোয়ান মহিলা রেখে দেন, তাহা হলে ঐ মায়ের বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়া লাগে না। ত্রিশ হাজার টাকা দু’ মেয়ের আমেরিকার ১/২ দিনের বেতন মাত্র।
অন্য দেশের বৃদ্ধাশ্রম আর বাঙলাদেশের বৃদ্ধাশ্রমের মধ্যে অনেক ফারাক। ইউরোপের বৃদ্ধাশ্রম বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য সত্যিকারই একটা অভয়ারন্য প্রতিষ্ঠান। পক্ষান্তরে বাঙলাদেশের বৃদ্ধাশ্রম বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে অরন্য সমতুল্য প্রতিষ্ঠান।
বাঙালী জাতি বিশ্বে সবচেয়ে বেশী অতিথীপরায়ন। আর আজ বাঙালী জাতি বিশ্বে সবচেয়ে বেশী দুর্নীতিপরায়ন।
এ’ প্রসঙ্গে দক্ষিন বঙ্গের কথাসাহিত্যিক, কবি অধ্যাপক আবদুল হাকিমের লেখা কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়ছে——
সংসদে কথার ঢেউ
কাজ করেনা কেউ
আমলারা সব জাতীয় জঞ্জাল,
দেশটারে সামলারে বুভূক
দেশটারে সামলা।
মা বাবা জানে ওরশজাত সন্তান, পিতা মাতার কষ্টে সারা দিবেনা। জেনেও পাখা দিয়ে ঢেকে রেখে, বুকে আগলে সন্তানদের লালন করে বড় করে তোলে। আর এটাই নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিয়ম।।